আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায়

আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায় বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লিখতে বসলাম। আরো লেখা হবে ভালো খারাপ আঁচিল চেনার উপায়। শরীরে আঁচিল কেন হয়। তিল দূর করার উপায়। আঁচিল ও তিল শরীরে হলে খুব বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়।
যার কারণে আচিল ও তিল দূর করা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। এগুলো বিষয় জানতে আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকুন।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকের আর্টিকেল আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায়। আঁচিল হচ্ছে শরীরের রুক্ষ প্রবৃদ্ধি যা চামড়ার উপরে অনেকটা ফুলকপির মত অথবা ফোসকার মতো দেখা যায়। আঁচিল সাধারণত মানুষের হাতে পায়ে অথবা শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। মানবদেহে ১০ রকমের আঁচিল বা ফুসকুড়ি হতে পারে।
আর ও পড়ুনঃগ্রোথ হরমোন বৃদ্ধির ১৫টি খাবার
এর মধ্যে বেশিরভাগ আচিল নিরীহ বলে মনে করা হয়। মানবদেহে পাপিলোমা ভাইরাস এর সংক্রামণের কারণে বিভিন্ন ধরনের আঁচিল হয়। এপর্যন্ত 130 ধরনের পাপিলোমা ভাইরাস এর সন্ধান পাওয়া গেছে। যা মানব দেহের বিভিন্ন রকম সংক্রামণ ঘটিয়ে থাকে। সাধারণত ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে আঁচিল দূর করা সম্ভব।

ভাল-খারাপ আঁচিল চেনার উপায়

আজকের আর্টিকেল আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায়। পাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আমাদের দেহে আচিল হয়। অধিকাংশ আঁচিল কোন ক্ষতির কারণ হয়না। তবে কিছু কিছু আঁচিল রয়েছে যা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ভালো ও খারাপ আচিল চেনার উপায় গুলো আলোচনা করা হলো।

*আঁচিল অসম আকৃতি হলে এবং অর্ধেকটা একরকম এবং অপরটি অন্যরকম হলে সতর্ক থাকতে হবে।
*প্রাথমিক অবস্থায় আচিল ত্বকের রং এর ছোট ফুসকুড়ির মত দেখা যায় যা অমসৃণ ও শক্ত হতে থাকে।
*আঁচিলের সাধারণত কোন ব্যথা থাকে না।
*আচিল হলে চুলকানি থাকে না তবে যৌনাঙ্গের আঁচিলে চুলকানি হতে পারে।
*আঁচিল গুলির বাহিরের দিক অসম হলে সুচলো অংশ থাকলে কিংবা তা খুব খারাপ অবস্থা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
*বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রং হলে যেমন কোন অংশ খয়েরি কোন অংশ কাল হলে সতর্ক থাকতে হবে।
*আঁচিলের আকৃতি যদি সাত মিলিমিটারের বেশি হয় তাহলে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
*আঁচিলের আকার আকৃতি অথবা রং পরিবর্তন হলে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায়

ত্বকে আচিল হলে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়। সাধারণত হাত-পা এবং শরীরের ত্বকের বিভিন্ন অংশে আঁচিল হতে পারে। অধিকাংশ আচিল আমাদের কোন ক্ষতি করে না। তবে কিছু কিছু আচিল রয়েছে যা ক্যান্সারের সংক্রামণ হতে পারে। যার কারনে আচিল হলে খুব তাড়াতাড়ি দূর করা প্রয়োজন। আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায় জেনে নিন।
আর ও পড়ুনঃঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে করণীয়
আলু ব্যবহারের মাধ্যমেঃ গোল আলুর মাধ্যমে আচিল দূর করা যায়। এই ক্ষেত্রে নিয়ম হলো কাঁচা সতেজ গোল আলু গোল করে কাটতে হবে। আলু দিয়ে দিনে কয়েকবার আচিলের স্থানে ঘোসতে হবে। এভাবে ঘোষতে থাকলে আস্তে আস্তে আচিল দূর হয়ে যাবে।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ আঁচিল দূর করতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহরকরা যায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে তুলা ভিজিয়ে আঁচিলের উপর রাখতে হবে। এভাবে সারারাত রাখতে হবে। আঁচিলের উপর এভাবে তুলা রাখলে আচিল আস্তে আস্তে মরে যাবে।

অ্যালোভেরা ব্যবহারঃ ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আঁচিল দূর করা যায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো অ্যালোভেরার পাতা কেটে নিয়ে সেখান থেকে জেলি বাহির করতে হবে। এই জেলি আচিলের ওপর কয়েকদিন ব্যবহার করলে আঁচিল পড়ে যাবে।

কলার খোসা ব্যবহারঃ কলা অত্যন্ত উপকারী ফল যা খাওয়ার মাধ্যমে পটাশিয়াম এর ঘাটতি পূরণ হয়। কলার খোসা ব্যবহারের মাধ্যমে আঁচিল দূর করা যায়। কলার খোসার ভিতরের অংশ দিয়ে আঁচিলের উপর কয়েকবার ব্যবহার করতে হবে এবং সারারাত রেখে দিতে হবে।

এছাড়াও কলার খোসার পেস্ট তৈরি করে আচিলের উপর ব্যবহার করে সারারাত দেখে দিতে হবে। সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। কয়েকদিন ব্যবহার করলে আচিল পড়ে যাবে।

রসুন ব্যবহারঃ রসুন ব্যবহারের মাধ্যমে আঁচিল দূর করা যায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো এক কোয়া রসুন ভালো করে পেস্ট করুন। অতঃপর আচিলের জায়গায় ব্যবহার করে ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখুন। এক থেকে দেড় ঘন্টা পরে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন করলে আচিল পড়ে যাবে।

পেঁয়াজের রস ব্যবহারঃ পেঁয়াজের রসে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক গুন যাহা বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করতে হবে। তুলা দিয়ে পিয়াজের রস আঁচিলের জায়গায় ভালো করে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে আঁচিল দূর হয়ে যাবে।

এসপিরিন ওষুধঃ এসপিরিন ওষুধের মাধ্যমে আঁচিল দূর করা যায়। ক্ষেত্রে নিয়ম হল এসপিরিন ওষুধ ও সামান্য পানি দিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট আচিলের উপর ব্যবহার করে গজ দিয়ে বেঁধে নিন। এভাবে সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে আচিল পড়ে যাবে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের মাধ্যমে আঁচিল দূর করা যায়। এক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ভিতরের তেল আঁচিলের ওপর ভালো করে লাগিয়ে দিতে হবে। অতঃপর আচিলের জায়গাটি ব্যান্ডেজ করে বেঁধে দিতে হবে। সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে কয়েকদিনের মধ্যে আচিল পড়ে যাবে।

ক্যাস্টর অয়েলঃ কাস্টর অয়েল আচিল দূর করতে ব্যবহার করা হয়। এক চামচ ক্যাস্টর অয়েল এর সঙ্গে এক চামচ বেকিং সোডা নিয়ে পেস্ট করতে হবে। এই পেস্ট আচিলের উপর লাগিয়ে সারারাত রেখে দিতে হবে। সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে আচিল পড়ে যাবে।

আনারস ব্যবহারঃ আনারস ব্যবহারের মাধ্যমে আঁচিল দূর করা যায়। কিছু পরিমাণ আনারসের রস এর সঙ্গে সামান্য সামুদ্রিক লবণ মিশ্রিত করে আঁচিলের জায়গায় লাগিয়ে স্ক্রাব করতে হবে। নিয়মিত এভাবে করলে আচিল পড়ে যাবে।

ডালিমের খোসা ও লেবুর রসঃ ডালিমের খোসা ও লেবুর রসের মাধ্যমে চমৎকারভাবে আঁচিল দূর করা যায়। এক্ষেত্রে ডালিমের খোসা শুকিয়ে পাউডার বানাতে হবে। সামান্য ডালিমের খোসার পাউডারের সঙ্গে লেবুর রস মিশ্রিত করে আঁচিলের জায়গায় ভালো করে ব্যবহার করতে হবে। কয়েকদিন ব্যবহার করলে আচিল পড়ে যাবে।

টিট্রি ওয়েলঃ টিট্রিঅয়েলে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে যা ত্বকের ইনফেকশন দূর করে। একটি তুলা প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন অতঃপর সেখান থেকে টিট্রি ওয়েলে ভিজিয়ে নিন। উক্ত তুলা আঁচিলের উপর লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে দিন।

তিন চার ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলুন। দিনে তিনবার ব্যবহার করা প্রয়োজন। কয়েকদিন ব্যবহার করলে আঁচিল পড়ে যাবে।

শরীরে আঁচিল কেন হয়

আজকের আর্টিকেল আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায়। নারী এবং পুরুষ উভয়েরই আঁচিল হয়। বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁচিলের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। টাইমস অফ ইন্ডিয়া ডট কম এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের চর্ম রোগ পরামর্শক ও কসমেটোলজিস্ট ডাক্তার স্নেহা ঘুণাওয়াত আঁচিল সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে জানান।
আর ও পড়ুনঃভোরে ঘুম থেকে ওঠার ১০টি উপকারিতা
*বারবার ঘষা অথবা চাপ লাগার জায়গায় আচিল দেখা যায়। যেমন চোখের উপরে, গলা, বাহু মূলে, কুচকি ও কোমরে আচিল দেখা যায়।
*আচিল সাধারণত ত্বকের রং অথবা ত্বকের চেয়ে কাল বর্ণের হয়ে থাকে।
*আচিল দেখতে মসৃণ হলেও ফাইব্রোস কোষ, স্নায়ু ও রক্তনালী থাকে।
*সংক্রমনের মাধ্যমে আচিল হয়। অনেক সময় ঘষা লাগার ফলে আঁচিল থেকে রক্ত পড়ে। অবস্থা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
*বংশগত কারণে আচিল হতে পারে। এছাড়াও ওজন বৃদ্ধি ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর কারণে আচিল হয়।
*বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেকের আঁচিল বৃদ্ধি পায়।
*যাদের বংশে ডায়াবেটিস, বাড়তি ওজন, আছে তাদের আঁচিল উঠার সম্ভাবনা থাকে।

তিল দূর করার উপায়

সূর্যের তাপের মধ্যে অতিরিক্ত কাজ করার ফলে ত্বকের তেলতেলে ভাব অথবা হরমোন এর ব্যালেন্স ঠিক না থাকার কারণে তিল হতে পারে। বাড়িতে বসেই ঘরোয়াভাবে তিল দূর করা যায়। আসুন জেনে নেই তিল দূর করার ঘরোয়া উপায়।

আলু ব্যবহারঃ তাজা সতেজ গোল আলু ব্যবহারের মাধ্যমে তিল দূর করা যায়। এক্ষেত্রে আলু চাকা চাকা করে কেটে নিতে হবে। আলু দিয়ে তিলের জায়গায় ভালো করে ঘষতে হবে। দিনে ৪-৫ বার ব্যবহার করা প্রয়োজন। কয়েক দিন ব্যবহার করলে তিল দূর হয়ে যাবে।

রসুন ব্যবহারঃ রসুন ব্যবহারের মাধ্যমে তিল দূর করা যায়। রসুন পেস্ট করে তিলের জায়গায় ভালো করে ব্যবহার করতে হবে। সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। কয়েকদিন ব্যবহার করলে তিল দূর হয়ে যাবে

নারিকেলের তেলঃ নারিকেলের তেল ব্যবহারের মাধ্যমে তিল দূর করা যায়। তিলের জায়গায় নারিকেলের তেল ভালো করে মেসেজ করতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে তিল দূর হয়ে যাবে।

অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল এর মাধ্যমে তিল দূর করা যায়। এক্ষেত্রে তিলের জায়গা ভালো করে ধুয়ে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে তিল দূর হবে।

কলার খোসাঃ কলার খোসা ব্যবহারের মাধ্যমে তিল দূর করা যায়। তিলের জায়গায় কলার খোসার ভেতরের অংশ দিয়ে ভালো করে লাগিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও কলার খোসার পেস্ট তৈরি করে তিলের জায়গায় লাগাতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে তিল দূর হয়ে যাবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠকগণ আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায় বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লেখা হলো। এছাড়াও আরও লেখা হয়েছে ভালো খারাপ আঁচিল চেনার উপায়। শরীরে আঁচিল কেন হয়। তিল দূর করার উপায়। শরীরে আঁচিল ও তিল হলে অত্যন্ত অস্বস্তিকর সমস্যা তৈরি হয়। যার কারনে আচিল ও তিল দূর করার প্রক্রিয়াগুলো জানা প্রয়োজন।

এগুলো বিষয় গুগল সহ বিভিন্ন গ্রন্থ ও বিভিন্ন চিকিৎসা সাময়িকী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো বিষয় জানতে আজকের আর্টিকেল ভিজিট করুন। আশা করি ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url