ঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে করণীয়
প্রিয় পাঠকগণ ঠান্ডায় গলা ব্যাথা হলে করণীয় এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লিখতে বসলাম। আরো লেখা হবে ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়। গলা ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত না। ঢোক গিলতে গলা ব্যথার ওষুধের নাম।
গলা ব্যথা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আজকের আর্টিকেলের লেখা হইছে। গলা ব্যথা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ভূমিকা
আজকের আর্টিকেল ঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে করণীয়। গলা ব্যথা অত্যান্ত কষ্টকর সমস্যা যা ছোট বড় সবারই হয়। সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া এর আক্রমণের কারণে অধিকাংশ গলা ব্যথা হয়। এছাড়া ওর ঠাণ্ডা লাগার কারণে টনসিল ফুলে যে গলা ব্যথা হয়। এলার্জি এর কারণে গলা ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
আর ও পড়ুনঃপা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
এছাড়াও সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা লাগা বিভিন্ন সমস্যার কারণে গলা ব্যথা হয়। কলা ব্যথা হলে কোন কিছু খাওয়া অনেক কষ্টকর হয়। যার কারণে গলা ব্যথা দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
গলা ব্যথা এমন একটি সমস্যা যা ছোট বড় সবারই হয়। গলা ব্যথা হওয়ার কারণে সকল প্রকার খাবার খাওয়া কষ্টকর হয়। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সহ 200 টি এর বেশি উদ্ভিদ জীবাণু আক্রমণের কারণে গলা ব্যথা হয়। কাক কেউ আক্রান্ত হয়ে গলা ব্যথা হলে সেখান থেকে অন্যজনেরও পার হয়ে যায়।
সাধারণত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জনকীর্ণ স্থানে এই সমস্যা বেশি বিস্তার লাভ করে। এছাড়াও বাচ্চারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলাফেরা করলে বাচ্চাদের গলা ব্যথা সমস্যার বৃদ্ধি পেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর লালা থুথু অথবা বাতাসের মাধ্যমে অন্য জনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য গ্রহণ রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ধোঁয়া এবং যন্ত্রণাদায়ক বিভিন্ন বস্তুর সংস্পর্শে আসলে গলা ব্যাথা সমস্যা বৃদ্ধি পায়। ব্যথা একজনের কাছ থেকে অন্য জনের পার হতে পারে।
তার কারণে গলা ব্যথা হলে খুব শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা সহ ভালো চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেলের বিষয় ঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে করণীয়। গলা ব্যথার কারণ গুলো আলোচনা করা হলো।
*সর্দি-কাশি সহ ভাইরাসের দ্বারা ইনফেকশন এর কারণে।
*এলার্জিজনিত কারণে গলা ব্যথা হতে পারে।
*গরম ও শুষ্ক বাতাসের কারণে গলা শুকিয়ে যায় যার জন্য গলা ব্যথা হতে পারে।
*ধোয়া ও কেমিক্যাল এর সংস্পর্শে আসার কারণে গলা ব্যাথা হতে পারে।
*গলায় কোন কিছুর আঘাত লাগলে গলা ব্যথা হতে পারে।
*ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এর কারণে গলা ব্যথা হতে পারে।
*রাতে হঠাৎ ঠান্ডা লাগলে অথবা ঠান্ডা পানি খেলে গলা ব্যথা হতে পারে।
ঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে করণীয়
ঠান্ডা লাগলে সর্দি-কাশির সঙ্গে গলা ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও অত্যাধিক গরমে গলাতে ঘাম হওয়ার কারণে ঠান্ডা লাগে যার কারণে গলা ব্যথা হয়। ঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
হলুদ ও দুধ একত্রে খাওয়াঃ হলুদে আন্টি অক্সিডেন্ট অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও প্রদাহ নাশক উপাদান রয়েছে। হলুদ খাওয়ার কারণে শরীরের প্রদাহ দূর হয় ও গলা ব্যথা ভাল হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এক গ্লাস গরম দুধে কিছু পরিমাণ কাজ কাঁচা হলুদ মিশ্রিত করে খেলে গলাব্যথা দূর হয়।
আদা চাঃ সর্দি কাশি ও গলা ব্যাথার মত সমস্যা হলে আদা চা খেলে নিরাময় হয়। আদায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার কারণে আদা চা খেলে বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।
আদা গুড় ও জোয়ানঃ সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা দূর করার জন্য আদা গুঁড় ও জোয়ান একসঙ্গে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো সামান্য গুড়ের সঙ্গে আদা কুচি ও জোয়ান মিশ্রিত করে খেতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
লবণ পানিঃ লবণ পানি গড়গড়ার মাধ্যমে গলা ব্যথা দূর করা যায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম পানিতে দুই চামচ লবণ মিশ্রিত করে গড়গড়া করতে হবে। দিনে তিন থেকে চার বার গড়গড়া করতে হবে। দুই-তিন দিন এভাবে করলে গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
লেবুর রসঃ লেবুর রস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের টক্সিন দূর হয় এছাড়া শরীরের প্রদাহ দূর হয়। এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস ও এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই পানিও দিনে তিনবার পান করতে হবে। খুব দ্রুত সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
মধু খাওয়াঃ মধু খাওয়ার মাধ্যমে গলা ব্যথা দূর হয়। এক কাপ গরম পানিতে এক থেকে দুই চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশানো পানিও দিনে তিনবার খেতে হবে। এভাবে ২-৩ দিন খেলে গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
রসুন খাওয়াঃ রসুন খাওয়ার মাধ্যমে গলা ব্যথা ভাল হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে গলা ব্যথা হলে রসুনের ভিতর অ্যালিসিন আছে যা খেলে ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে গলা ব্যথা ভালো করবে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে। সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা নিরাময়ে এটি ভালো কাজ করে। এক গ্লাস গরম পানিতে দুই চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও এক চামচ মধু মিশ্রিত করে দিনে দুইবার খেতে হবে। ২-৩ দিন খেলে সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা নিরাময় হবে।
তুলসীঃ গলা ব্যথা ও সর্দি কাশি নিরাময়ে তুলসী পাতা অনেক উপকারী। এক গ্লাস গরম পানিতে কিছু পরিমাণ তুলসীর পাতা নিয়ে ভালো করে ফোটাতে হবে যে পর্যন্ত না পানির রং পরিবর্তন হয়েছে। ফুটানো পানির ছাঁকনি দিয়ে শেখে কুসুম কুসুম গরম হলে খেয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দিনে দুইবার করে খেলে সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা নিরাময় হবে।
সুপ খাওয়াঃ গলা ব্যথা কমাতে স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে কুসুম কুসুম গরম সুপ খাওয়ার মাধ্যমে ঠান্ডা লাগা এবং গলা ব্যথা নিরাময় হয়।
বেকিং সোডাঃ গলা ব্যথা নিরাময়ের বেকিং সোডা ব্যবহার করা যেতে পারে। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা ও এক চামচ লবণ দিয়ে মিশ্রিত করে তিন ঘন্টা পর পর গড়গড়া করতে হবে। গলায় থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলো মরে যাবে এবং গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এর পরামর্শ অনুসারে এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা ও এক চামচ লবণ মিশিয়ে তিন ঘন্টা পর পর গারগোল করলে দ্রুত গলা ব্যথা সেরে যায়।
গোল মরিচঃ গোল মরিচ সর্দি-কাশি ও গলা ব্যাথা নিরাময়ের অত্যন্ত কার্যকর। এক গ্লাস পানিতে কয়েকটি গোল মরিচের দানা নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। গরম পানি চায়ের মত করে খেলে গলা ব্যথা নিরাময় হয়।
গলা ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত না
গলা ব্যথা হলে কোন কিছু খাওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। এরপরেও গলা ব্যথা হওয়ার কারণে সবকিছু খাওয়া ঠিক না। আজকের আর্টিকেল ঠান্ডায় গলা ব্যাথা হলে করণীয়। গলা ব্যাথা হলে নিম্নলিখিত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
মচমচে খাবারঃ মচমচে ভাজাপোড়া যেমন চিপস বিস্কুট আলু ভাজা ইত্যাদি না খাওয়া ভালো। এগুলো খেলে গলা ফোলা ভাব ব্যাথা ও অস্বস্তি বৃদ্ধি করে। এগুলোর কণাগুলো অত্যন্ত ধারালো তাই গলা ব্যথার ইনফেকশনের জায়গাগুলো ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
সাইট্রাস জাতীয় ফলঃ সাইপ্রাস জাতীয় ফল এ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এরপরেও টক জাতীয় ফল খেলে ফলের অম্লতা গলার ব্যথা বৃদ্ধি করে এবং অস্বস্তি তৈরি করে। তবে ইচ্ছা করলে কুসুম কুসুম গরম পানিতে লেবু জাতীয় ফল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
এসিডিক খাবারঃ বিভিন্ন ধরনের এসিডিক খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। যেমন টমেটোর সস গলা ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। এইজন্য গলা ব্যথা না কমা পর্যন্ত টমেটো সস না খাওয়া।
মসলাদার খাবারঃ গলা ব্যথা হলেও মসলাদার খাবার না খাওয়া ভালো। মসলাদার খাবার খাওয়ার মাধ্যমে গলার অস্বস্তি তৈরি হয়।
কাঁচা শক্ত সবজিঃ গাজর কাঁচা পেঁপে ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও গলা ব্যথা হলে এগুলো খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। এগুলো খাবার খেলে গলা ব্যথা রোগীদের গলার অস্বস্তি তৈরি হয়।
রুটি ও ভাজা খাবারঃ রুটি ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। এগুলো খাবার খাওয়ার মাধ্যমে টনসিল আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ছাড়াও গলা ব্যথা অস্বস্তি তৈরি হয়। গলা ব্যথা ভাল হলে এগুলো খাবার খাওয়া যাবে।
ঢোক গিলতে গলা ব্যথার ওষুধ নাম
হঠাৎ করেই আমাদের গলা ব্যথা হয়। দারুন তো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণেই বেশিভাগ গলা ব্যথা হয়। ভাইরাসের কারণে গলা ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে সেটা অবলম্বন করে ভাইরাসগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কিছু খাবার আছে যেগুলো খাবার খেলে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
গলা ব্যথা ভালো করার জন্য আমরা ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি যার দ্বারা গলা ব্যথা দূর হবে। এরপরেও ঘরোয়া পদ্ধতিতে গলা ব্যথা ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কিছু ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি গলা ব্যাথা ভালো হয়ে যেতে পারে। ওষুধগুলোর নাম হলঃ
Raxim 100mg Tablet.
Cefinar 100mg Tablet.
Claforan 100mg Tablet.
Pedixim 100mg. Tablet.
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় প্রিয় পাঠক বৃন্দ ঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে করণীয় বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লেখা হয়েছে। গলা ব্যথা অত্যান্ত কষ্টকর যা আমাদের সবারই হয়। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ হওয়ায় গলা ব্যথা হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
গলা ব্যথা দূর করার ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য গুগল সহ বিভিন্ন গ্রন্থ হতে সংগ্রহ করে লেখা হয়েছে। এগুলো বিষয়ে জানতে আজকের আর্কিকেল ভিজিট করুন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url