পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
সুপ্রিয় পাঠকগণ পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে এই বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লিখতে বসলাম। আরো লেখা হবে পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর করার ঘরোয়া উপায়। পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ কি। পা ফাটা দূর করার উপায়।
পা ফাটা দূর করার ক্রিম বাংলাদেশ। পা ফাটা অত্যন্ত কষ্টকর সমস্যা ও বিরম্বনার কারণ। যার কারণে পা ফাটা দূর করার জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে।
ভূমিকা
আজকের আর্টিকেলের বিষয়ে পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে। সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেলস এর অভাবে পা ফাটার সমস্যা হয়। এছাড়া পায়ের অযত্ন এবং পা সব সময় কাঁদাবালিতে থাকলে পা ফাটা সমস্যা হয়।
বিশেষ করে শীতের সময় পা ফাটার সমস্যা অনেক বেশি হয়। এ সময় বাতাসের আদ্রতা কম থাকার জন্য এই সমস্যা অনেক বেশি। নিয়মিত পায়ের যত্ন ও ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব পূরণ করলে পা ফাটা নিরাময় সম্ভব।
পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর করার ঘরোয়া উপায়
শীতের সময় আমাদের পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। আবার অনেকের সারা বছরই পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। সঠিকভাবে পায়ের যত্ন নিতে পারলে গোড়ালি ফাটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আজকের বিষয় পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে। পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর করার ঘরোয়া উপায় আলোচনা করা হলো।
মধুর ব্যবহারঃ মধু ব্যবহারের মাধ্যমে পায়ের গোড়ালিফাটা হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো এক বালতি গরম পানি যেখানে পা রাখা যাবে। এক বালতি পানিতে এক কাপ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। পানিতে দুই পা ডুবিয়ে মেসেজ করুন।
এই ক্ষেত্রে পাথর অথবা অন্য প্রস্তু দিয়ে পা ঘষতে পারেন। পা ঘসার পরে পায়ে মোটা করে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে দিন। এভাবে কয়েকদিন করলে পায়ের গোড়ালি ফাটা ভালো হয়ে যাবে।
এলোভেরা ব্যবহারঃ অ্যালোভেরা ব্যবহারের মাধ্যমে পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর করা যায়। একটি বালতিতে হালকা গরম পানি নিয়ে পা দুটি ডুবিয়ে রাখতে হবে। পাথর দিয়ে পা ঘোসে পরিষ্কার করতে হবে। এরপরে পায়ে মোটা করে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে দিতে হয়। রাতে পায়ে মোজা লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে নিতে হবে।
ভ্যাসলিন ব্যবহারঃ ভ্যাসলিন ব্যবহারের মাধ্যমে পায়ের গোড়ালি ফাটা ভালো করা যায়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো গরম পানিতে ২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২০ মিনিট পরে তা শুকিয়ে নিয়ে এক চামচ ভ্যাসলিন সেখানে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে মিশ্রন করে পায়ে লাগিয়ে দিতে হবে।
পায়ের মোজা পড়ে রাতে ঘুমাতে হবে। সকালে উঠে হালকা গরম পানিতে পা ধুয়ে নিতে হবে। কয়েকদিন করলে পায়ের গোড়ালি ফাটা নিরাময় হবে।
ক্রিম বা জেল লাগানোঃ একটি পাত্রে কিছু হালকা গরম পানি নিয়ে সেখানে আধা চামচ নারকেলের তেল ও লবণ দিয়ে মিশ্রণ করতে হবে। অতঃপর এই মিশ্রণে দুই পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।পায়ে যদি বেশি ময়লা থাকে তাহলে তিন চামচ চালের গুড়ার সঙ্গে এক চামচ মধু ও ভিনেগার মিশিয়ে ঘন পেস্ট করে নিতে হবে।
এই পেস্ট পায়ের গোয়ালি ফাটা অংশে ভালো করে ব্যবহার করুন। হালকা গরম পানিতে পা দুটি ধুয়ে ফেলুন তাহলে পা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরপরে পায়ে জেল অথবা ক্রিম লাগিয়ে রাখুন। কয়েকদিন এইভাবে করলে পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর হয়ে যাবে।
মাক্স ব্যবহারঃ গোড়ালি ফাটার মাক্স পাওয়া যায়। মাক্স পায়ে ব্যবহারের ফলে গোড়ালির মরা চামড়া দূর হবে এবং পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর হবে। এছাড়া রাতে ঘুমানোর সময় সুতির মোজা পড়ে ঘুমাতে হবে তাহলে পায়ে বায়ু চলাচল ভালো হবে।
পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
কিছু ভিটামিন আছে যা আমাদের দেহে অভাবের কারণে পা ফাটে। এর মধ্যে ভিটামিন বি১২ বা ফলেট ভিটামিন এ ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি। আসুন আমরা জেনে নেই পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে।
বি ১২ বা ফোলেটঃ মানবদেহে ভিটামিন বি১২ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ শরীরের লোহিত রক্ত কণিকাকে বৃদ্ধি করে এবং এনিমিয়া রোগ হতে রক্ষা করে। এছাড়াও ভিটামিন বি১২ এর অভাব হলে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে যার কারণে পা ফাটার সমস্যা হয়।
সাধারণত বি১২ জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন বি১২ এর অভাব পূরণ হয়। এছাড়াও ভিটামিন বি ১২ এর অভাব হলে সাপ্লিমেন্ট খেয়ে অভাব দূর করা যায়।
ভিটামিন এঃ ভিটামিন এ শরীরের রক্তকণিকা নিয়ন্ত্রণ, চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, ও ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ভিটামিন এ এর অভাবে পায়ের ফাটা সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করা যায়। এরপরেও গুরুতর অভাব হলে সাপ্লিমেন্ট খাবার মাধ্যমে ভিটামিন এ এর অভাব দূর করা যায়।
ভিটামিন ইঃ ভিটামিন ই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যা শরীরের কোষের অক্সিডেশন কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ই এর অভাব থাকলে পা ফাটা সমস্যা হতে পারে।
এক্ষেত্রে ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন ই এর অভাব পূরণ করা যায়। এরপরেও গুরুতর ভিটামিন ই এর অভাব হলে সাপ্লিমেন্ট খেয়ে ভিটামিন ই এর অভাব পূরণ করা যায়।
ভিটামিন সিঃ ভিটামিন সি এমন এক জাতীয় ভিটামিন যাহার শরীরের ত্বকের যাবতীয় কার্যক্রমের সহায়তা করে। যার কারণে ভিটামিন সি এর অভাব হলে পা ফাটার সমস্যা হয়। ভিটামিন সি ত্বকের গভীরে পৌছে ত্বকের মৃত কোষ কে অপসারণ করে নতুন কোষ তৈরি করে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করা যায়। এছাড়াও গুরুতর ভিটামিন সি এর অভাব হলে সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করা যায়।
এছাড়াও ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবে পা ফেটে যায়। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও পেশি সুরক্ষায় ব্যবহার হয়। এছাড়াও ত্বকের সকল কার্যক্রমে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পায়ের গোয়ালি ফাটার কারণ কি
শীতকালে বিশেষ করে আমাদের অনেক বেশি পা ফাটে। এছাড়াও অনেকের শীত ও গ্রীষ্মকাল উভয় সময় পা ফাটে। আজকের আর্টিকেলের বিষয় পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে। পা ফাটার কারণগুলো বর্ণনা করা হলো।
আর ও পড়ুনঃ উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বাড়ানোর ১০টি উপায়
*শরীরে কিছু ভিটামিনের অভাবে পা ফাটে। ভিটামিন গুলো ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ও ভিটামিন বি ১২ বা ফোলেট।
*বিভিন্ন রকম মিনারেলস এর অভাবে পা থাকে যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ও আয়রন।
*মানবদেহের পানির অভাব হলে পা ফাটে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন।
*গরম পানিতে গোসল অথবা পায়ের অযত্নের কারণে পা ফাটে।
*ডায়াবেটিস অথবা স্নায়ুতন্ত্র জনিত অসুস্থতার কারণে পা ফাটতে পারে।
*অনেক সময় জেনেটিক কারণে পা থাকলে অর্থাৎ পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষের পা ফাটা থাকলে তাদের উত্তরপুরুষদের পা ফাটে।
*প্রতিদিন পা পরিষ্কার করে পায়ের যত্ন না নিলে পা ফাটে।
পা ফাটা দূর করার উপায়
শীতের সময় আমাদের পা ফাটার সমস্যা হয়।যার কারনে শীতের সময় পায়ের যত্ন একটু বেশি নিতে হয়। এছাড়াও পায়ে ধুলাবালি ও ময়লা থাকার কারণে পা ফাটে। যার কারণে পায়ের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আজকের বিষয় পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে। পা ফাটা দূর করার উপায় গুলো আলোচনা করা হলো।
ভিটামিনের অভাব পূরণঃ ভিটামিন এ ভিটামিন সি ভিটামিন ই ও ভিটামিন বি১২ এর অভাবে পা ফাটে। এ কারণে এগুলো ভিটামিনের অভাব পূরণ করতে হবে। সাধারণত এগুলো ভিটামিন জাতীয় খাবার খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিনের অভাব পূরণ করা যায়।
খনিজ লবনের অভাব পূরণঃ খনিজ লবনের মধ্যে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম জিংক ও আয়রন এর অভাবে পা ফাটে। যার কারণে এগুলো খনিজ লবণ এর অভাব পূরণ করা প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম ম্যাগনেশিয়ান জিঙ্ক ও আয়রন জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এগুলো খনিজ লবণ এর অভাব পূরণ করা যায় এবং পা ফাটা দূর করা যায়।
মোম ব্যবহারঃ কিছু পরিমাণ মোম এর সঙ্গে সরিষার তেল মিশ্রিত করে পায়ের ফাটার স্থানে ব্যবহার করতে হবে। উক্ত মম সারারাত পায়ে রাখতে হবে। এভাবে কয়েকদিন করলে পা ফাটা দূর হয়ে যাবে।
গ্লিসারিন ও গোলাপজল ব্যবহারঃ গোলাপ জলের সঙ্গে কিছু পরিমাণ গ্লিসারিন মিশ্রিত করতে হবে। এই মিশ্রণ পায়ে ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে সারারাত রাখতে হবে। এভাবে কয়েকদিন করলে পায়ের ব্যথা ও ফাটা দূর হয়ে যাবে।
তিলের তেল ব্যবহারঃ তিলের তেল ব্যবহারের মাধ্যমে পা ফাটা দূর করা যায়। ক্ষেত্রে নিয়ম হলো প্রতিদিন ঘুমানোর আগে পায়ে তিলের তেল ভালো করে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে কয়েকদিন করলে পা ফাটা ভালো হয়ে যাবে।
ভেসলিন ও লেবুর রস ব্যবহারঃ ভেসলিন ও লেবুর রস মিশ্রিত করে পায়ে ব্যবহারের মাধ্যমে পা ফাটা ভালো হয়। এক্ষেত্রে নিয়ম হল ভ্যাসলিনের সঙ্গে কয়েকটা লেবুর রস মিশ্রিত করতে হবে। এই মিশ্রণ রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে ভালো করে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে কয়েক দিন করলে পা ফাটা ভালো হয়।
মধু ও পানির ব্যবহারঃ এক বালতি গরম পানিতে এক কাপ মধু মিশ্রণ করতে হবে। এই পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এভাবে কয়েক দিন করলে পা ফাটা দূর হয়ে যাবে।
পা ফাটা দূর করার ক্রিম বাংলাদেশ
বাজারে পা ফাটা ক্রিম সম্পর্কে আপনারা কি জানতে চান। বাজারে বহু ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। পা ফাটার সমস্যা থাকলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো প্রয়োজন। এ ছাড়া কি কারনে পা ফাটে সেগুলো নির্ণয় করা প্রয়োজন। ডাক্তারের পরামর্শ চিকিৎসা করলে অনেক ভালো হবে।
আর ও পড়ুনঃঘর ধুলো বালি মুক্ত রাখার উপায়
আসুন জেনে নিয়ে বাজারে যেগুলো পা ফাটার ক্রিম রয়েছে। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য ক্রিম হলঃ রেমি পা ফাটা ক্রিম, হিল গারড, ইমুরিয়া ২৫, বোরো প্লাস, ক্রেক হিল, হিমালয় ফুট কেয়ার, কেক ক্রিম, ইত্যাদি অন্যতম। এগুলো বাজারে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। পা ফাটার জন্য এগুলো ক্রিম ব্যবহার করা যায়।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠকগণ পা ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লেখা হয়েছে। এছাড়াও পা ফাটার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ঘরোয়া উপায়ে পা ফাটা ভালো করার বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যার সমাধানের উপায় গুলো আলোচনা করা হয়েছে।
এগুলো বিষয়ক গুগল সহ বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করে আজকের আর্টিকেল লেখা হয়েছে। আজকের আর্টিকেল ভিজিট করার মাধ্যমে পা-পাটা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url