মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার
সুপ্রিয় পাঠকগণ মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার বিষয় আজকের আর্টিকেল লিখতে বসলাম। এছাড়া আরো আলোচনা করা হবে মরিচের ফুল ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার। মরিচের জাত নির্ণয়। মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়।
এগুলো বিষয়ে গুগল সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো বিষয় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ভূমিকা
মরিচ অত্যন্ত সুস্বাদু এবং উপকারী মসলা। শাকসবজিতে সাধ বৃদ্ধি করার জন্য আমরা মরিচ ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া মরিজ অত্যাধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। মরিজে প্রোটিন, ভিটামিন ও বিভিন্ন ধরনের মিনারেলস বিদ্যমান। যাহার কারণে শাকসবজিতে মরিচ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা মরিজের পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে পারি।
আর ও পড়ুনঃ প্যানিক এটাক থেকে মুক্তির উপায়
এছাড়াও মরিজ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। মাছ মাংস ও শাকসবজিতে মরিচ ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের দেহের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও মরিচ খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। আজকের বিষয় মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার।
মরিচের ফুল ঝরে পড়ার কারন ও প্রতিকার
মরিজে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি ভিটামিন বি রয়েছে। সাধারণত শাক সবজি তে মুখরোচক হিসেবে মরিচ ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু মরিচ উৎপাদনে অনুকূল পরিবেশ আছে।
এরপরেও আবহাওয়ার কিছু প্রতিকূল পরিবেশ ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে মরিজের ফুল ঝরে যায়। মরিজের ফুল ঝরে যাওয়ার কারণঃ
*সাধারণত দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর বেশি হলে অথবা রাতের তাপমাত্রা ১৬° সেন্টিগ্রেড এর কম হলে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*অতিরিক্ত পরিমাণ বৃষ্টি হলে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*মরিচের গাছে পানি জমে থাকলে মরিচের ফুল ঝরে যায় এছাড়াও মরিচের গাছ মরে যেতে পারে।
*মরিচের ফুলে পরাগায়ন না ঘটলে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*মরিচে ফুল আসা গাছে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করলে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*নাইট্রোজেন ফসফরাস ও পটাশিয়াম এর অভাবের কারণে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*অনেক সময় মরিচের ফুলে শোষক জাতীয় পোকার আক্রমণে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*মাটিতে বোরন সারের অভাব হলে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*মরিচের গাছ এর পানির অভাব হলে। মরিচের গাছের গোড়া শুকিয়ে গেলে সেখান থেকে মরিচের গাছ পানি গ্রহণ করতে পারেনা যার কারণে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
*মরিচের গাছে সূর্যের আলো না পেলে মরিচের ফুল ঝরে যায়।
মরিচের ফুল ঝরে যাওয়া প্রতিরোধ করার প্রয়োজন। মরিচের ফুল ঝরে গেলে মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়। মরিচের ফুল ঝরে যাওয়ার প্রতিকার বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ
*মরিচ চাষের জন্য দোআঁশ মাটি অথবা বেলের দোআঁশ মাটি হতে হবে।
*মরিচের জমিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে যাতে মরিচের গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে।
*অতিরিক্ত পরিমান কীটনাশক স্প্রের না করা। অতিরিক্ত পরিমাণ কীটনাশক স্প্রে করার ফলে উপকারী পোকা মরে যায় যার কারণে পরাগায়ন ব্যাঘাত ঘটে।
*জাব পোকা সাদা মাছি ইত্যাদি শোষক পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
*মরিচের গাছে জিব্রেলিক এসিড বা ট্রায়াকন্টোনল হরমোন ৭ দিন পর পর স্প্রে করা প্রয়োজন।
*সুষুম সার ব্যবহার করা।
*বোরণের অভাব থাকলে বোরণ জাতীয় সার ব্যবহার করা।
*মরিচের জমিতে সেচ ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেচ দিতে হবে।
*যে জমিতে সূর্যের আলো পড়ে সেখানে মরিচ লাগাতে হবে। ছায়াযুক্ত জায়গায় মরিচ লাগানো যাবে না।
এগুলো প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা গেলে মরিচের ফুল ঝরা বন্ধ হবে। মরিচের ফুল থেকেই মরিচ উৎপন্ন হয়। যার কারনে মরিচের ফুল ঝরা বন্ধ হলে মরিচের উৎপাদন ভালো হবে। আজকের আর্টিকেলের বিষয় মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার।
মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার
মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগের কারণে মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়। যার কারণে মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার জানা প্রয়োজন। মরিচের পাতা কোকড়ানোর কারণঃ
আর ও পড়ুঃ ৩৬জুলাই বিপ্লব শহীদদের সঙ্গে পরিচয় হই এক
*বেগমো ভাইরাসের কারণে মরিচের পাতা কোকড়ানো সমস্যা তৈরি হয়।
*সাধারণত সাদা মাছি ও গুড়িপোকার কারণে মরিচের পাতা কোকড়ানো সমস্যা তৈরি হয়।
*সাদা মাছি আক্রমণের ফলে বেগমো ভাইরাস মরিচের পাতা কোকড়ানো সমস্যা সৃষ্টি করে।
*ভাইরাসে আক্রান্ত মরিচ থেকে চারা তৈরি করলে পাতার কোকড়ানো সমস্যা তৈরি হয়।
পাতা কোকড়ানো রোগ থেকে প্রতিকারঃ
*ভাইরাস প্রতিরোধী মরিচের জাত ব্যবহার করতে হবে। ভাইরাস বিহীন গাছ থেকে মরিচের বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
*সাদামাছি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে লাইলনের জাল ব্যবহার করে সাদামাছি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
*মরিচের গাছের চারিধার দিয়ে ভুট্টা, জোয়ার, মুক্তা বাজরা, জাতীয় ফসল চাষ করার মাধ্যমে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
*সাদা মাছি আকর্ষণ করে এমন ধরনের হলুদ ফাদ ব্যবহারের মাধ্যমে সাদামাছি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
*জমিতে এবং জমির পার্শ্বে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগাছা থাকলে সাদা মাছির আক্রমণ বেশি হয়।
*ফসল সংগ্রহ এর পরে উক্ত জমিতে গভীরভাবে চাষ দিতে হবে।
*মরিচের ফসলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে নিম তেল অথবা পেট্রোলিয়াম জাতীয় তেল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাইরাস দূর করা যায়।
*নিম পাতা পানি দিয়ে ফুটিয়ে উক্ত পানি ব্যবহারের মাধ্যমে মরিচ ফসলের ভাইরাস দূর করা যায়।
*এমবেকটিন (১.৮ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে কোম্পানির নির্দেশ অনুযায়ী স্প্রে করতে হবে। প্রথম স্প্রে এর পরে তিন থেকে পাঁচ দিন পরে আবার স্প্রে করতে হবে। এভাবে সাদা মাছি ও ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করে মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ দূর করা যায়।
মরিজের জাত নির্ণয়
শাক সবজি রান্নায় মরিচ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মসলা। মরিচের আদি নিবাস আমেরিকা মহাদেশে হলেও বাংলাদেশে পর্যাপ্ত মরিচ উৎপন্ন হয়। আমাদের দেশে দুই জাতীয় মরিচ রয়েছে। একটি মিষ্টি মরিজ অপরটি ঝাল মরিজ। আমরা শাকসবজিতে সাধারণত ঝাল মরিচ ব্যবহার করে থাকি।
আর ও পড়ুনঃ আঁচিল দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায়
আমাদের দেশে কুমিল্লা নোয়াখালী চাঁদপুর ফরিদপুর বরিশাল পটুয়াখালী ও বগুড়ায় পর্যাপ্ত মরিজ চাষ হয়। মরিচের বিভিন্ন প্রকার জাত রয়েছে। ঝাল মরিচের প্রধান জাত গুলো হলো নাগা মরিচ, বগুড়ার মরিচ, বিজলি মরিচ, চাঁদপুরি মরিচ, ফরিদপুরি মরিচ, ইত্যাদি।
এছাড়াও আঞ্চলিকতা ভেদে মৌসুমী মরিজের জাত গুলো হল কামরাঙ্গা মরিচ, আকালি মরিচ, কালো মরিচ, জিয়া মরিচ, বিন্দু মরিচ, ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে চাষকৃত মরিচ যেমন মেজর মরিচ, যমুনা মরিচ, বালি ঝুরা মরিচ, সাহেব মরিচ, বোম্বাই মরিচ, ধানি মরিচ, পাটনাই মরিচ, গোল মরিচ, বারি
মরিচ ইত্যাদি।
বারি মরিচের জাত আবার তিনটি যেমন গ্রীষ্ম জাত, শীত জাত এবং উভয়ঋতুর জাত। শীত ও গ্রীষ্ম উভয় সময় আমাদের দেশে মরিচ চাষ হয়। আমাদের দেশে মরিজের উৎপাদন প্রতি হেক্টর পাঁচ থেকে ছয় মেট্রিক টন।
তবে নাগা মরিচ বিজলি মরিচ চাঁদপুরি মরিচ ইত্যাদি কিছু মরিচের জাত রয়েছে যাতে অত্যাধিক ফলন হয়। আজকের বিষয় মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার।
মরিজের ফলন বৃদ্ধির উপায়
আজকের আর্টিকেলের বিষয় মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার। আমাদের দেশে সারা বছর মরিচ চাষ করা হয়। তবে আমাদের দেশে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় মরিচ চাষ করা হয়। সাধারণত শীতকাল থেকে শুরু করে বর্ষার আগ পর্যন্ত চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত মরিচ চাষ করা হয়। এছাড়া আমাদের দেশে প্রচুর জমিতে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে মরিচ চাষ করা হয়।
আমাদের দেশের মাটিগুলো মরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত। আমাদের দেশে বহু জাতের মরিচ চাষ করা হয়। তবে অত্যাধিক ফলনের জন্য বারি মরিচ ১ বারি মরিচ২ বারি মরিচ ৩ বিজলি মরিচ ইত্যাদি হাইব্রিড জাতীয় মরিচের চাষ করা হয়।
এছাড়াও বর্ষাকালে বৃহত্তর রাজশাহী নাটোর অঞ্চলে বিন্দু ও জিয়া জাতের মরিচ চাষ করা হয়। এগুলো মরিচের ফলন অনেক বেশি। মরিজের ফলন বেশি পেতে মরিজের গাছগুলোর সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো প্রয়োজন। এছাড়াও মরিচের জমি ভালো করে প্রস্তুত করতে হবে যেন কোথাও পানি না জমে থাকে।
মরিচের জমিতে মরিচ লাগানোর সময় মরিচের চারা গুলো শোধন করে নিতে হবে। মরিচের জমিতে মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুযায়ী সুষম সার ব্যবহার করা প্রয়োজন। মরিচের ফলন বৃদ্ধির জন্য বোরন জাতীয় সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
মরিচের গাছগুলো বড় হয়ে যাওয়ার পরে মরিজের গাছ যেন কুঁকড়ানো সমস্যা না হয় সেজন্য যত্ন করতে হবে। এছাড়াও ফুল ও ফল ঝরে পড়া দূর করতে হবে। সূর্যালোক লাগে এমন জায়গায় মরিচ চাষ করলে মরিচের ভালো ফলন পাওয়া যায়।
এছাড়াও অত্যাধিক খরার কারণে মরিজের গাছ লাল হয়ে যায় অথবা ফুল ঝরে যায়। যাহার কারণে খরার সময় নিয়মিত পানি শেচের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
নিয়মিত পানি শেচ মরিচের রোগ জীবাণু দমন ও সুসম সার ব্যবহারের ফলে মরিজের পর্যাপ্ত ফলনপাওয়া যায়। তাই আসুন সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মরিচের ফলন বৃদ্ধি করে নিজের সংসারের আয় বৃদ্ধি করি।
লেখক এর মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠকগণ মরিজের পাতা কুকড়ানোর কারন ও প্রতিকার বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণত মরিচ উৎপাদনের বড় অন্তরায় হলো মরিজের পাতা কোকড়ানো। যার কারণে মরিজের ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মরিজের পাতা কোকড়ানো ও ফুল ঝরে যাওয়া প্রতিরোধ করতে হবে।
এছাড়াও ভালো যত্নের মাধ্যমে মরিজের ফলন অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। নতুন নতুন কিছু হাইব্রিড জাত আসছে এগুলো মরিজের ফলন অনেক বেশি। মরিচ চাষ সম্পর্কিত এগুলো তথ্য জানতে আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url